মানুষের শরীরে প্রত্যেকটা অঙ্গ অত্যন্ত মূল্যবান। তার মধ্যে নাক অনেক মূল্যবান একটি অঙ্গ। নাক দিয়ে মানুষ তার অতি প্রয়োজনীয় শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ এবং ত্যাগ করে। এর সঙ্গে সঙ্গে গন্ধও বুঝতে পারে। নাকের দুই পাশে দুটি ছিদ্রযুক্ত কক্ষ আছে। এই কক্ষ দুটির মাঝখানে যে একটি দেয়াল আছে একে সেপ্টাম বলা হয়।
এই সেপ্টামে ফোমা হলে নাকের মাংশ বাড়তে পারে। এছাড়া আরও যেসব কারণে এই রোগ হতে পারে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
নাকের বুটি বা মাংস বেড়ে গেলে।
বাইরের শক্ত কিছু আটকে যাওয়া বা ঢোকা থেকে।
অনেক সর্দিজনিত কারণে হতে পারে।
সাইনুসাইটিসের জন্য হতে পারে।
টিউমারজনিত কারণে (প্যাপিলোমা বা ফাইব্রোমা বা ক্যান্সার)।
যে কোনো আঘাতের কারণে হতে পারে।
রোগের লক্ষণগুলো
এই রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর মধ্যে সচরাচর যে সমস্যাগুলো বা লক্ষণগুলো দেখা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
নাকের ভিতর শিরশির করতে থাকে।
নাক সব সময় ভারি বোধ হয়।
নাক সব সময় বন্ধ থাকে, বিশেষ করে রাতে যখন ঘুমাতে যায় তখন যে পাশে কাত হয় তার বিপরীত পাশে।
ফোলা ফোলা মনে হয়।
নাকের উপরি ভাগে লাল রং হয়ে থাকে।
নাক দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া যায় না। বেশির ভাগ সময় মুখ হাঁ করে শ্বাস টানতে হয়।
স্থায়ী চিকিৎসা
সঠিকভাবে কারণ বুঝে এই রোগের চিকিৎসা দিতে হবে। আর এই সমস্যার স্থায়ী চিকিৎসা হলো হোমিওপ্যাথি। লোকাল কোন ডাক্তারের কাছে না গিয়ে একজন অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ট্রিটমেন্ট নিলে অবশ্যই এই রোগ থেকে মুক্তি লাভ করবেন।
সাধারণত ইথময়েড সাইনাস থেকে পলিপ তৈরি হয়। কখনও কখনও ম্যাক্সিলারি সাইনাস থেকেও পলিপ তৈরি হতে পারে। নাকের মধ্যে ফাংগাস ইনফেকশন আমরা অনেক সময় দেখে থাকি। নাকের ফাংগাল (ছত্রাক) ইনফেকশন থেকে নাকের উভয় দিকে এবং এ ক্ষেত্রে একাধিক সাইনাস পলিপ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এ পলিপগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে সাইনাসের ভেতর থাকে।
এক সময় এটা বাড়তে বাড়তে সাইনাস থেকে নাকের ভেতরে চলে আসে এবং তখন আমরা খালি চোখে নাকের ভেতরে পলিপ দেখতে পাই। এগুলো দেখতে অনেক সময় সাদা আঙ্গুরের থোকার মতো থাকে। অনেক সময় পলিপে ইনফেকশন হলে বা আঘাতজনিত কারণে এর ত্বকের স্তর মিউকোসা ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনেক সময় এটা লালচে রঙ ধারণ করতে পারে। রোগীরা সাধারণত যাকে পলিপ বলে থাকেন সেটা আসলে নাকের মধ্যে মাংস ফুলে যাওয়াকে তারা বুঝিয়ে থাকেন। মেডিকেলের ভাষায় একে হাইপারট্রপিড ইনফেরিয়র টারবিনেট বলা হয়। নাকের ভেতরে, পার্শ্ব দেয়ালে দুই দিকে দুইটি তাকের মতো মাংসপিণ্ড থাকে।
একে আমরা ইনফেরিয়র টারবিনেট বলি। এই ইনফেরিয়র টারবিনেটের প্রদাহ হলে এর আকৃতি বড় হয়ে যায়। যাকে হাইপারট্রপিড ইনফেরিয়র টারবিনেট বলা হয়। এটা সাইনাস থেকে আসে না। নাকের ভেতর থেকে এর উৎপত্তি। মেডিকেল ভাষায় এটা পলিপ নয়। অনেক ক্ষেত্রেই পলিপ এবং হাইপারট্রপিড ইনফেরিয়র টারবিনেটের কারণ একই এবং এ দুটো একসঙ্গে বিদ্যমান থাকে।
পলিপের উপসর্গ
প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীরা সাধারণত নাক দিয়ে সর্দি ঝরা, নাক বন্ধ ভাব এ ধরনের সমস্যায় ভোগেন। নাকের এ সর্দি সামনের দিকে আসতে পারে। অনেক সময় এটা সামনের দিকে না এসে পেছন দিকে চলে যায় এবং ঢোক গিলা বা গলা পরিষ্কার করার মতো প্রবণতা দেখা যায়। নাক বন্ধ থাকাটা প্রাথমিক পর্যায়ে একদিকে থাকে এবং কিছুক্ষণ পরপর এটা দিক পরিবর্তন করে নাকের দুই দিকে হয়। কিছু সময় এক নাক বন্ধ থাকে আবার কিছু সময় আরেক নাক বন্ধ থাকে। অসুখ যত বাড়তে থাকে ততই দেখা যায় ধীরে ধীরে দুটো নাকই বন্ধ হয়ে যায়, প্রথমে আংশিকভাবে এবং পরে সম্পূর্ণভাবে।
হাঁচি থাকতে পারে এবং অল্প ধুলাবালি বা ধোঁয়াতে গেলেই প্রচণ্ড হাঁচি হতে থাকে। সিগারেটের বা রান্নার ধোঁয়া সহ্য হয় না। দম বন্ধ ভাব চলে আসে।
নাকের ঘ্রাণশক্তি কমে যায় এবং অনেক সময় নাকে দুর্গন্ধ পাওয়া যায়।
মাথাব্যথা সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পলিপ যখন বেশ বড় আকার ধারণ করে তখন মাথাব্যথা চলে যায়। এর কারণ যে অবস্থাতে আমরা পলিপ দেখতে পাই সে অবস্থাতে মাথাব্যথার সমস্যা সাধারণত থাকে না। মাথা এবং কপালের সম্মুখ বা নাক এবং এর আশপাশে একটা বন্ধ ভাব থাকতে পারে। এ সময় রোগীর ইতিহাস নিলে অবশ্যই দেখা যাবে, কয়েক মাস বা কয়েক বছর আগে যখন এ রোগ শুরু হয়েছিল তখন তাদের মাথাব্যথার সমস্যা ছিল। পলিপ যখন বেশি বড় হয়ে যায় তখন মাথাব্যথার সমস্যাটা এতটা প্রকট থাকে না।
দেখা যায় কিছু কিছু রোগীর গলায় খুসখুস ভাব থাকে। অনেকের আবার কাশিও থাকতে পারে। গলায় নিয়মিত প্রদাহ বা মুখ দিয়ে নিয়মিত শ্বাস নেয়ার ফলে অনেক সময় গলার স্বর বসে যায় বা গলা বসা বা স্বরভঙ্গ থাকতে পারে।
নাকের পেছনে ইউস্টেশিয়ান টিউব আক্রান্ত হওয়ার কারণে অনেক সময় মধ্য কর্ণে সমস্যা হয়ে থাকে। কান বন্ধ বন্ধ ভাব বা কানের ভেতর পানি যাওয়ার কারণে কান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাথা ঘুরানোর সমস্যাও থাকতে পারে। মধ্যকর্ণের এ সমস্যা থেকে অল্প-স্বল্প মাথা ঘুরানোভাব থেকে শুরু করে মারাত্মক রকমের মাথা ঘুরানোর সমস্যা থাকতে পারে। এ ছাড়াও কানের ভেতরে শোঁ শোঁ আওয়াজের সমস্যাও হতে পারে। কানের ভেতরে অনেক দিন পানি জমে থাকলে কানের পর্দা নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদে কান পাকা রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
পলিপের কারণ
নাকের পলিপের কারণ নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। সাধারণভাবে বলা যায় নাকের এলার্জি এর অন্যতম কারণ। এ এলার্জি নাকের ভেতরে ধুলাবালি বা ধোঁয়ার এলার্জি থেকে হতে পারে। অনেকে মনে করেন, নাকের ভেতরে ক্রনিক ইনফেকশনও এ এলার্জির কারণ হতে পারে। নাকের ভেতরে ফাংগাল ইনফেকশনের এলার্জি থেকে কিছু কিছু রোগীর উভয় নাকে এবং অনেক সাইনাসজুড়ে পলিপ তৈরি হয়। নাকের ভেতরে রক্তনালির অসাঞ্জস্যতা বা অস্থিরতা থেকেও অনেক সময় পলিপ তৈরি হয় বলে অনেকে মনে করেন। নাকের এলার্জি যেটাকে আমরা এলার্জিক রাইনাইটিস বলি, গলার এলার্জি যেটাকে আমরা এলার্জিক ফ্যারিনজাইটিস এবং ফুসফুসের এলার্জি যেটাকে আমরা অ্যাজমা বা হাঁপানি বলে থাকি- এর একটা আরেকটার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
যাদের নাকের এলার্জি আছে তাদের শতকরা ১৭ থেকে ১৯ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে হাঁপানিও আছে। যাদের হাঁপানি আছে তাদের ৫৫ থেকে ৭০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে নাকের এলার্জিও থাকে। বিশেষভাবে বলা উচিত, নাকের এলার্জি ও ফুসফুসের এলার্জির (হাঁপানি) একটির প্রভাব আরেকটির ওপর পড়ে। নাকের এলার্জি ঠিকমতো কন্ট্রোল না করলে অনেক সময় হাঁপানি বেড়ে যেতে পারে বা হাঁপানির চিকিৎসা করা দুরূহ হতে পারে। সে রকম ফুসফুসের এলার্জি বা হাঁপানি ঠিকমতো চিকিৎসা করা না হলে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া নাকের ওপর পড়ে।
পলিপের চিকিৎসা
প্রাথমিক চিকিৎসা হল ধুলাবালি, ধোঁয়া ও ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলা। তবে এই রোগ থেকে স্থায়ী ভাবে মুক্তি পেতে অবশ্যই আপনাকে হোমিও চিকিৎসা নিতে হবে। এর জন্য অভিজ্ঞ একজন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নেয়া একান্ত দরকার।
গ্রীক শব্দ (Asthma) থেকে বাংলায় হাঁপানি। যার অর্থ হাঁপান বা হাঁ করে শ্বাস নেয়া। হাঁপানি বলতে আমরা বুঝি শ্বাসপথে বায়ু চলাচলে বাধা সৃষ্টির জন্য শ্বাস কষ্ট। ডাক্তারখানায় একে বলা হয় Dyspnoea. অ্যাজমা বা হাঁপানি মূলত শ্বাসনালির প্রদাহজনিত একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। এই প্রদাহের ফলস্বরূপ শ্বাসনালি ফুলে যায় এবং অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে হাঁপানির বিভিন্ন উপসর্গ (যেমন— শ্বাস-কষ্ট, কাশি, বুকের মধ্যে শোঁ শোঁ শব্দ, বুকে চাপ অনুভূত হওয়া ইত্যাদি) দেখা যায়। সঠিক সময়ে ও নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহনের মাধ্যমে এ উপসর্গগুলো সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
হাঁপানির লক্ষণ
শ্বাস কষ্ট
সাঁ, সাঁ শব্দে কষ্টসহকারে শ্বাস নেয়া
শুকনো কাশি
বুকে চাপ ধরা বা দমবন্ধভাব অনুভব করা।
হাঁপানি তিনভাবে প্রকাশ হতে পারে:
আপাত সুস্থ লোকের হঠাৎ শ্বাসকষ্ট আরম্ভ হয়ে কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘণ্টা পরে কষ্ট উপশক এবং রোগী আবার নিজেকে সুস্থ মনে করেন।
শ্বাসকষ্ট হঠাৎ আরম্ভ হয়ে আর কমে না; উপরন্তু বেড়ে যেতে থাকে। কোন ওষুধে হাঁপানি কমে না। যদি এ অবস্থা বারো ঘণ্টার বেশী স্থায়ী হয়, তবে সে ধরনের হাঁপানিকে বলা হয় স্ট্যাটাস অ্যাজম্যাটিকাস বা অবিরাম তীব্র হাঁপানি।
এক শ্রেণীর রোগীদের শ্বাস পথে বাতাস চলাচলে সব সময়ই অল্প বাধা থাকে। বহুদিন এ অবস্থা থাকার ফলে কষ্টের অনুভূতি কম হয় এবং রোগী অল্প কষ্ট অনুভব করেন। কোন কারণে শ্বাস পথে বায়ু চলাচলে আরো বাধার সৃষ্টি হলে তখনই হাঁপানির কষ্ট অনুভূত হয়।
লক্ষণ প্রকাশের ধরণ
বেশীরভাগ হাঁপানি রোগীর শ্বাসকষ্ট হঠাৎ আরম্ভ হয়; সঙ্গে থাকে শুকনো কাশি ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে সাঁ সাঁ শব্দ (Wheeze) অল্প পরে শ্বাসের কষ্ট আরো বেড়ে যায় এবং বুকের মধ্যে চাপ সৃষ্টি হয়। প্রশ্বাসের সময় শ্বাসনালীর ব্যাস আরো সরু হয়ে যায় এবং সেই সরু নালীর মধ্যে বাতাস চলাচলের সময় বাঁশীর মত আওয়াজ শোনা যায়। এ ধরনের শ্বাসকষ্ট সাধারণত হয় রাতে এবং তখন রোগী উঠে বসে থাকে। বেশীরভাগ রোগীর শ্বাসকষ্ট শেষ রাতে বাড়তে দেখা যায়। হাঁপানিকারক
খাদ্যের সংরক্ষণ বা গুণগত সমৃদ্ধকারী বস্তু (মেটাবাইসালফেট)।
রং করা খাদ্য (যেমন- হলুদ রং এর জন্য টারটারজিন।
অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি
অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি সবচেয়ে বেশী দেখতে পাওয়া যায়। এ ধরনের হাঁপানি শ্বাস পথের শ্লেষ্মা ঝিল্লীর অতিসংবেদনশীলতার জন্য হতে পারে। শ্লেষ্মা ঝিল্লীর উত্তেজনা ঘটতে পারে নানাভাবে নানাদিক থেকে, যেমন- পরাগ রেনু, নানাজাতের ছত্রাক ও ছাতা পড়া জিনিস, ঘরের ভিতরের ধূলিকণা, কয়েক প্রকার খাবার, পোকা-মাকড়ের হুলের বিষ বা তাদের শারীরিক কোন অংশ। কোন কোন ক্ষেত্রে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেও হাঁপানির আক্রমণ হতে দেখা যায়। অ্যালার্জির কারণে
হাঁপানির আক্রমণ সাধারণত: শৈশবকালে ঘটে। এ ধরনের হাঁপানি স্থায়ী হতে পারে এবং তা বংশানুক্রমে চলতে থাকে। তবে কৈশোরের দিকে তা উপশমও করা যায়। এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে নাসিকা প্রদাহ (সর্দি) এবং একজিমা হতে দেখা যায় পরিবারের। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যেও তা দেখা যায়। যে সব জিনিসের অ্যালার্জিতে হাঁপানি হতে পারে:
ক. পরাগ রেনু: ফুলের বা ঘাসের পরাগ রেনু। পরাগ রেনু থেকে হাঁপানি হতে পারে এ তথ্য স্বীকৃতি পেয়েছে ১৯২০ সালে। তবে সব জাতের পরাগ রেনুতে অ্যালার্জি বা হাঁপানি দেখা দেয় না। সেই রেনুতে অ্যালার্জি সৃষ্টি করার উপাদান থাকা চাই। তাছাড়া রেনু খুব হালকা হওয়া চাই, যা বাতাস সহজে বহন করতে পারে এবং পরিমাণে যথেষ্ট থাকা দরকার। কারণ বাতাসে ছড়িয়ে যাওয়ার পর যদি যথেষ্ট মাত্রায় রেনু শ্বাসপথে না যায়, তাহলে অ্যালার্জি বা হাঁপানি হবে না। বিভিন্ন হাঁপানি রোগীর বিশেষ বিশেষ রেনু দ্বারা হাঁপানি হয়ে থাকে। যে পরাগ রেনু একজনের হাঁপানি সৃষ্টি করে, তা অন্যের কোন ক্ষতি না করতে পারে। রেনুর উৎস নানা সূত্র থেকে যেমন: গাছ, গুল্ম ঘাস, ফুল ইত্যাদি। ফলের রেনুতে যাদের অ্যালার্জি থাকে, তারা সাধারণত: বিশেষ কোন ঋতুতে অ্যাজমাতে আক্রান্ত হয়। কারণ এক এক ফুল এক এক ঋতুতে পরাগ রেনু ছড়ায়।
খ. খাদ্য: খাদ্য থেকে অ্যালার্জি ও হাঁপানি হয় এ তথ্য বহুকাল পূর্ব থেকেই জানা যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রেটাস ও খাদ্য থেকে অ্যালার্জির কথা বলে গিয়েছেন। কি কি খাদ্য থেকে অ্যালার্জি বা হাঁপানি হতে পারে তার তালিকা হবে অতি দীর্ঘ যেমন: ডিম, চিংড়িমাছ ও গরুর গোস্ত থেকে অ্যালার্জি বা হাঁপানি হতে পারে, এতথ্য বহুল প্রচারিত। এছাড়া আরো যেসব খাদ্যে অ্যালার্জি হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে, ইলিশ মাছ, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, কলা, পুইশাক, ডাল, গমের তৈরি খাদ্য, চাল, কমলালেবু, আপেল, আঙ্গুর, তরমুজ, শশা, কাজুবাদাম, চীনাবাদাম, সজিনা ডাটা, মূলা, পিঁয়াজ, রসুন, সরিষা, ওলকপি, চকোলেট, গুড়, মধু, দুধ ও দুধ থেকে তৈরি খাবার ইত্যাদি।
এখানে মনে রাখা দরকার যে, সব খাদ্য থেকে সবার অ্যালার্জি নাও হতে পারে। ব্যক্তি ভিন্নতায় বিভিন্ন খাদ্য বিভিন্নজনের অ্যালার্জি হতে পারে। একই ধরনের খাবারে যে সকলেই অ্যালার্জি হবে এমন কোন কথা নেই। তবে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য বা রঙ্গিন করার জন্য যে সব রাসায়নিক বস্তু ব্যবহার করা হয় তার দ্বারা অনেকেরই অ্যালার্জি হতে পারে। বর্তমানে দেশে অ্যালার্জি সনাক্তকরণের ব্যবস্থা রয়েছে, যার দ্বারা ইচ্ছা করলে সকলেই অ্যালার্জিকারক খাদ্য সনাক্ত করে নিতে পারেন। তবে কেবলমাত্র খাদ্যের জন্য অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি রোগীর সংখ্যা খুবই কম।
গ. ধূলিকণা: বাড়ির ধূলিকণা নাকে ঢুকলে হাঁপানি হতে পারে। ঘর-বাড়ির ধূলোতে বিশেষ করে কার্পেট, তোষক, লেপ, কম্বল, বালিশ, পাপোষ, ইত্যাদিতে এক প্রকার ‘মাইট' (mite) জাতীয় জীবাণু থাকে। এরা ঘরের ধূলিকণাতে মিশে থাকে। কোন প্রকারে শ্বাসপথে এই মাইট মিশ্রিতি ধূলিকনার প্রবেশ ঘটলে শরীরে অ্যালার্জি জাতীয় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তার ফলে হাঁচি, নাক দিয়ে প্রচুর পানি পড়া বা হাঁপানী রোগ হতে পারে। ঘ. পতঙ্গজনিত অ্যালার্জি: কোন পোকা বা পতঙ্গ কামড়ালে আমরা ব্যথা পাই এবং সেই কামড়ানোর জায়গা ফুলে ওঠে। প্রায় সব প্রকার পতঙ্গের হুলে বিষ থাকে, তা কোন ক্ষেত্রে বেশী আবার কোথাওবা কম। এ ধরনের বিষ মানুষের শরীরে অ্যালার্জিজনিত বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এ প্রকার অ্যালার্জেনের দ্বারা ক্ষেত্র বিশেষে হাঁপানি হতে পারে। যে সব পতঙ্গ থেকে মানুষের হাঁপানি হতে পারে তাদের সংখ্যাও বেশি তালিকা খুবই দীর্ঘ। সাধারণত: ঘরের আরশুলা, মাঠের ফড়িং, প্রজাপতি, মথ, পঙ্গপাল এমন কি মশা পর্যন্ত এ তালিকায় আসতে পারে।
ঙ. ছত্রাকজনিত অ্যালার্জি: বর্ষার সময় অব্যবহৃত জুতো, ভিজে ছাতা, এমনকি ভিজে পোষাক ঠিক মত না শুকিয়ে ফেলে রাখলে এক ধরনের হালকা ধূসর সবুজ দাগ হয়। এটাকে ছত্রাক বলে। এ ছত্রাক দ্বারা কোন কোন ব্যক্তি হাঁপানি আক্রান্ত হতে পারেন। ছত্রাকের জন্ম বিভিন্ন খাবারেও হতে পারে, যেমন- পাউরুটি, বাসিরুটি, কেক, আলু, পেয়াজ ইত্যাদি। এছাড়া ঘরের ভিতরের আসবাবপত্র, কার্পেট, ঘরের কোণে জমা করা ময়লা কাপড় ইত্যাদিতে ভালভাবেই ছত্রাক জন্ময়। বাড়ির বাইরে বাগানে বা ছাদের টবে গাছের জন্য যে জৈবসার ব্যবহৃত হয় তাতে প্রায় সবক্ষেত্রেই নানাজাতের ছত্রাক পাওয়া যায়। গ্রামে গোয়াল ঘরের পাশে অহরহ ছত্রাক জন্মায়। অনেক সময় বাগানের গাছে বা ফুলে ছত্রাকের আক্রমণ ঘটে। সেই ফুল, ফুলদানীতে রাখলে মানুষের দেহে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
চ. আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জি: আবহাওয়া পরিবর্তনকালে অনেকের হাঁপানির আক্রমণ হতে দেখা যায়। কারো করো ঠান্ডা বাতাস লাগলে হাঁচি হয়, নাক দিয়ে পানি পড়ে, আবার কখনো কখনো হাঁপানি দেখা দেয়। ঠান্ডা পানি পান করলে, ঠান্ডার পানিতে গোসল কররে কারো কারো হাঁপানির আক্রমণ হয়ে থাক। ঋতু পরিবর্তনের সময় ঠান্ডা-গরমের তারতম্যের কারণেও কারো কারো হাঁপানির আক্রমণ প্রকট হতে পারে। শিশুদের মধ্যে শীতকালেই হাঁপানি হতে বেশি দেখা যায়। আমাদের দেশে শীতের শুরুতে, শীতের শেষে এবং অতিরিক্ত গরমে অ্যাজমার প্রকোপ বেশি হতে দেখা যায়।
ছ. ওষুধজনিত অ্যালার্জি: কোন কোন রোগের চিকিৎসায় অ্যালোপ্যাথিক কিছু ওষুধ শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। যেমন অ্যাড্রিনার্জিক, যা স্নায়ু শ্বাসনালীকে প্রসারিত করে। বিটাব্লকার বিশেষত প্রপানল জাতীয় ওষুধ অ্যাড্রিনার্জিক স্নায়ুর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ফলে এ জাতীয় ওষুধ খেলে অ্যাজমা রোগীদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে। অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধেও শ্বাসকষ্ট বাড়াতে পারে। বিভিন্ন প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক (যেমন- টেট্টাসাইক্লিন) ও কেমোথেরাপিউটিক ওষুধ ব্যবহারে অ্যালার্জিঘটিত প্রতিক্রিয়া হতে দেখা যায়। ফলে রোগীর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
জীবাণু সংক্রমণজনিত হাঁপানি:- শ্বাসনালীতে কোন প্রদাহ হলে তার শ্লেষ্মা ঝিল্লী ফুরে উঠে। শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটায়।। এ প্রদাহজনিত হাঁপানি সাধারণত: যাদের বয়স ২ বছরের নীচে বা ৪০ বছরের পরে তাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। দুই বছরের নিচের শিশুর হাঁপানি আক্রমণের কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাইরাস সংক্রমণ। বয়স্কদের ক্ষেত্রেও ভাইরাস সংক্রমণজনিত হাঁপানি হতে পারে। কৃমিজনিত বিশেষভাবে লম্বা কৃমি বা অ্যাসকারিস (Ascaris) জাতীয় কৃমির কারণেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
ব্যায়ামজনিত হাঁপানি: যেসব রোগী সব সময়েই কমবেশী হাঁপানিতে ভোগেন তারা অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তাছাড়া ব্যায়াম করলে সবারই শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হয়। অ্যাজমা রোগীদের শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন ঘন হওয়ার কারণে শ্বাস নালীর ভিতরটা শীতল হয়, ফলে স্বল্প পরিশ্রমেই তাদের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা, যাদের অ্যাজমা আছে, শ্বাস-কষ্ট শুরু হওয়ার ভয়ে তারা খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে পারে না। তবে সাইকেল চালান কিংবা সাতারের দরুন শ্বাসকষ্ট খুব কমই দেখা দেয়। কোন কোন রোগী কেবলমাত্র ব্যায়ামের কারণেই হাঁপানিতে আক্রান্ত হন।
পেশাগত কারণে হাঁপানি: কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন রাসায়নিক সামগ্রীর প্রতিক্রিয়ায় হাঁপানি হতে দেখা যায়। তবে পেশাগত কারণে হাঁপানি তখনই বলা যাবে, তখন কোন ব্যক্তি পেশাকে যোগ দেবার পূর্বে হাঁপানিতে আক্রান্ত ছিলেন না। বিশেষত: রং এর কারখানা, প্লাস্টিক কারখানা, সার কারখানা, পাটের মিল, খাদ্য উৎপাদন কেন্দ্র, ওষুধ কারখানা ইত্যাদি পেশায় যোগদানের পর শ্বাসকষ্টের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এসব রোগীর ক্ষেত্রে পেশায় যোগ দেবার কিছুদিন পর শ্বাসকষ্টের শুরু হয়। কিন্তু এ সমস্ত রোগীরা ছুটির দিনে ভাল থাকে। আবার কর্মস্থলে গেলেই শ্বাসকষ্ট বাড়ে।
মানসিক চাপের কারণে হাঁপানি: মনের অবস্থার সাথে হাঁপানির সম্পর্ক রয়েছে। মানসিক চাপ, মানসিক আঘাত, আবেগ, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, ভয় ইত্যাদি অবস্থায় শ্বাসকষ্ট বাড়ে। অনেকের অভিমত, অ্যাজমা প্রবণ রোগীদেরই মানসিক চাপে শ্বাসকষ্ট বাড়ে। বেশি কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক আঘাতের পরেই হাঁপানির আক্রমণ শুরু হয়েছে। অনেক মনোচিকিৎসক অভিমত দিয়েছেন, মানসিক চাপ থাকলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মানসিক কষ্টের কারণেই অ্যাজমার লক্ষণ প্রকাশ পেতে দেখা গেছে। বিশেষত বালক-বালিকারা অতি আবেগ প্রবণ হয়ে থাকে। তারা সামান্য মানসিক আঘাতেই আহত হয়। এমন আবেগ প্রবণ বালক বালিকাদের হাঁপানির আক্রমণ হতে দেখা যায়।
অন্যান্য কারণে হাঁপানি: নাকে পলিপ বা দুই নাসারন্দ্রের মধ্যবর্তী (Septum) বাকা থাকলে, নাকের পাশের ম্যাকজিলারী সাইনাসে জীবাণু সংক্রমণ ঘটলে অনেকের শ্বাসকষ্ট হতে দেখা যায়। এ ধরনের রোগীদের অনেকের, যেমন পলিপ সেরে গেলে বা অপারেশন করালে, সেপটামের দোষ এবং সাইনাসের সমস্যা কেটে গেলে তাদের শ্বাসকষ্ট কমে যেতে দেখা যায়।
হাঁপানির অবস্থা বুঝার জন্য কিছু বৈশিষ্ট্য
দিনে কতবার আক্রমণ হয়, যা ১২ ঘণ্টার বেশী স্থায়ী হয়।
রাতে কতবার আক্রমণ হয়।
ওষুধ ছাড়া চার সপ্তাহেরও বেশি সময় পর্যন্ত স্থায়ী লক্ষণ-মুক্ত সময়ের সংখ্যা।
হাঁপানি আক্রমণের কারণে কতগুলো কর্মদিবস বা স্কুল দিবস নষ্ট হয়।
স্বাভাবিক হবার জন্য কতটা ওষুধ প্রয়োজন।
কতবার চিকিৎসকের সাহায্য বা হাসপাতালে নিয়ে যাবার প্রয়োজন হয়েছে।
কোন প্রাণঘাতী আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে কি না।
অন্যান্য সহকর্মী বা সহপাঠীদের তুলনায় তার শারীরিক শক্তি কেমন? বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনা করে
হাঁপানিকে কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়- ১. সবিরাম মৃদু হাঁপানি
লক্ষণ মাঝে মাঝে দেখা দেয় প্রতি সপ্তাহে। ওষুধ না খেলে লক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হয়। অনেক সময় লক্ষণ প্রবল হতে পারে।
মাসে একবারের বেশি রাতের দিকে আক্রমণ হয় না।
কাজে যোগদান বা স্কুলে যাওয়ায় বাধা থাকে না।
স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে।
ন্যূনতম ওষুধ নিতে হয়।
২. মৃদু অথচ স্থায়ী হাঁপানি
সপ্তাহে দুইবার অথবা তিনবার লক্ষণ প্রকাশ পায়।
স্বাভাবিক কাজকর্ম এবং ঘুম বিঘ্নিত হয়।
মাসে এক বা দুইবার কাজে যোগদান বা স্কুল দিবস নষ্ট হয়।
প্রায় প্রতি রাতেই ‘ব্রঙ্কোডাইলেটর' প্রয়োজন হয়।
৩. মাঝারি প্রকোপের স্থায়ী হাঁপানি
প্রতিদিন লক্ষণের প্রকাশ ঘটে। বেশিরভাগ সময় অসুস্থ বোধ।
স্বাভাবিক কাজকর্ম এবং ঘুম বিঘ্নিত হয়।
মাসের ২ দিনের বেশি কর্মে যোগদান বা স্কুল দিবস নষ্ট হয়।
প্রতিদিন ওষুধের প্রয়োজন হয়।
৪. মারাত্মক আক্রমণাত্মক স্থায়ী হাঁপানি
সর্বক্ষণ লক্ষণের প্রকাশ।
ঘন ঘন প্রবল আক্রমণ।
রোগী রাতে ঘুমাতে পারে না।
ঘন ঘন হাসপাতালে যেতে হয়।
দ্রুত চিকিৎসা না নিলে কাজকর্ম বা লেখাপড়া বিঘ্নিত হয়।
৫. প্রাণঘাতী হাঁপানি
হঠাৎ লক্ষণের প্রকাশ এবং মারাত্মক আক্রমণ হয়।
অবিলম্বে হাসপাতালে পাঠাতে হয়।
উপশমকারী ইনহেলার ব্যবহারে ৫-১০ মিনিটের ভিতর শ্বাসকষ্ট যদি না কমে, তখন বুঝতে হবে হাঁপানির আক্রমণ মারাত্মক।
যেসব লোকের হাঁপানি বেশি হয় হাঁপানি রোগীদের ব্রঙ্কাস সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় কিছুটা অতিসংবেদনশীল। বিশেষ ধরনের উত্তেজক পদার্থের সংস্পর্শে তাদের দেহে এমন প্রতিক্রিয়া ঘটে, যার কিছুটা সুনির্দিষ্ট এবং কিছুটা অনির্দিষ্ট। যাদের কখনো হাঁপানি হয়নি এমন সুস্থ মানুষ ঐসব উত্তেজক পদার্থের সংস্পর্শে এলে সাধারণত কোন প্রতিক্রিয়া হয় না।
এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার কথা বিবেচনা করে হাঁপানি রোগীদের দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে:
১. বহির্জাত (Extrinsic) : এই রোগীদের ক্ষেত্রে বাইরের কোন অ্যালার্জিকারক শরীরে প্রবেশ করে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তাদের রক্তের সিরামে ইমুনোগ্লোবিউলিন-ই (IgE) বেশি পরিমাণে থাকে। অল্প বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। হঠাৎ রোগের আক্রমণ ঘটে এবং রোগ লক্ষণের উপশমও হয় হঠাৎ। এ ধরনের রোগীদের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক অ্যালার্জির ইতিহাস থাকে।
২. অন্তর্জাত (Intrinsic) : আপাত দৃষ্টিতে এ শ্রেণীর রোগীদের বাইরের কোন অ্যালার্জেন হাঁপানি সৃষ্টি করে না। শ্বাসপথে জীবাণু বা ভাইরাস সংক্রমণে শ্বাসকষ্টের সূত্রপাত হয়। তাছাড়া আবহাওয়ার তাপের গুরুতর তারতম্য এবং দূষিত পদার্থ শ্বাসপথের ঝিল্লিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাদের রক্তে সিরাম ইমুনোগ্লোবিউলিন-ই (IgE) কম বা স্বাভাবিক থাকে। সাধারণত প্রাপ্ত বয়স্ক বা মধ্যবয়সীদের মধ্যে হাঁপানি দেখা দেয়। রোগ দীর্ঘস্থায়ী ও পুরাতন এবং একটানা থাকে। কখনো পূর্ণ উপশম হয় না। ব্যক্তিগত বা বংশগত অ্যালার্জির ইতিহাস কমই পাওয়া যায়।
হাঁপানি রোগের লক্ষণ চিনার উপায়
শ্বাসকষ্ট, সাথে শুকনো কাশি।
শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বাঁশির মত সাঁ সাঁ শব্দ।
হঠাৎ দমবন্ধভাব অনুভব করা।
ধূলাবালি, বিশেষভাবে ঘরের ধূলা, ঠান্ডা কিংবা গরমের কারণে শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট।
পরিশ্রম করলে শ্বাসকষ্ট, সাথে বুকের ভিতর সাঁ সাঁ শব্দ।
ঋতু পরিবর্তনের সময় শ্বাসকষ্ট।
কষ্টকর কাশি, শ্বাসকষ্ট শেষ রাতে বাড়তে দেখা যায়।
বিটাব্লকার বা অ্যাসপিরিন খেলে শ্বাসকষ্ট।
উপরের যেকোন তিনটি লক্ষণ এক সাথে থাকলে হাঁপানি চিকিৎসার জন্য অভিজ্ঞ কোন হোমিও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। হাঁপানির সাথে অন্যান্য রোগের তুলনামূলক লক্ষণের বিবেচনা
শ্বাস পথে যান্ত্রিক অর্থাৎ নাকে পলিপ বা নাসারন্দ্রের অন্তর্বর্তী দেয়াল বাকা থাকলে (Septum) শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
মধ্যবয়সী ও বৃদ্ধদের হৃদরোগের লক্ষণ থাকলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
কারসিনয়েড সিনড্রম বা টিউমারজনিত উপসর্গাবলীতেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
এমফাইসিমা (Emphysema)রোগীদের শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে।
ক্রমিক ব্রঙ্কাইটিস রোগেও শ্বাসকষ্ট হয়।
ট্রপিকাল পালমোনারী ইয়োসিনোফিলিয়া ও অ্যাজমেটিক পালমোনারী ইয়োসিনোফিলিয়া (রক্তে ইয়োসিনোফিল কোষ বৃদ্ধি) থাকলে কাশির সাথে শ্বাসকষ্ট হয়।
শিশুরা (বয়স্করাও হতে পারে) অ্যাসাকারিস (Ascaris Lumbricoides) বা লম্বা কৃমির লার্ভা পেট থেকে ফুসফুসে ঢুকে অনেক সময় বায়ু চলাচলে বাধা সৃষ্টি করার ফলে শ্বাসকষ্ট হয়।
শিশুদের ফুসফুসে ভাইরাস সংক্রমণ ঘটলেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এ ধরনের তুলনামূলক শ্বাসকষ্ট বিচার করে হাঁপানি চিহ্নিতকরণের কাজটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে করতে হবে।
যখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি
শ্বাসকষ্টের সাথে বুকে ব্যথা। ঠোঁট বা জিভ নীলবর্ণ (সায়ানোসিস)। রক্তের নিম্ন চাপ।
শ্বাসকষ্টের সাথে জ্বর থাকলে।
শ্বাসকষ্টের সাথে কাশি এবং কাশির সাথে রক্ত। ৪. ৪০ বছরের পর হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে।
সর্দি হলে তা সারতে ১৫ দিনের বেশি সময় লাগলে।
শ্বাস-প্রশ্বাসের হার প্রতি মিনিটে ৩০ বা বেশি।
নাড়ির স্পন্দন প্রতি মিনিটে ১১০ বা বেশি।
অ্যাজমা প্রতিরোধের উপায়
অ্যালার্জিকারক বস্তু এড়িয়ে চলা। যেমন: ধূলো, বালি, ঘরের ঝুল, ধোঁয়া, ঝাঁঝালো গন্ধ ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা।
ঘর-বাড়িকে ধুলাবালি মুক্ত রাখার চেষ্টা করা। এ জন্য দৈনিক অন্তত: একবার ঘরের মেঝে আসবাবপত্র ভিজা কাপড় দিয়ে মুছতে হবে। অথবা ভ্যাকিউম ক্লিনার ব্যবহার করা।
ঘরে কার্পেট না রাখা।
বালিশ, তোষক, ম্যাট্রেস-এ তুলা ব্যবহার না করে স্পঞ্জ ব্যবহার করা।
শীতকালে যথাসম্ভব গরম পানিতে ওজু গোসল করা।
ধূমপান না করা।
যেসব খাবারে অ্যালার্জিত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তা পরিহার করে চলা।
পেশাগত কারণে অ্যাজমা হলে চেষ্টা করতে হবে স্থান বা পেশা পরিবর্তনের।
পরিশ্রম বা খেলাধুলার কারণে শ্বাসকষ্ট বাড়লে চেষ্টা করতে হবে পরিশ্রমের কাজ পরিহার করা।
সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করা। ইতিবাচক মন আপনাকে ভাল থাকতে সাহায্য করবে।
পরাগ রেণু পরিহারে সকাল-সন্ধ্যা বাগান এলাকায় বা শস্য ক্ষেতের নিকট না যাওয়া।
পরাগ রেণু এলাকা থেকে বাসায় ফিরে মাথার চুল এবং কাপড় ধুয়ে ফেলা।
কুকুর, বিড়াল বাগান থেকে পরাগ রেণু বহন করতে পারে এ জন্য নিয়মিত কুকুর-বিড়ালকে গোসল করানো প্রয়োজন।
অ্যাজমা রোগীদের খাবার
চিংড়ি মাছ, গরুর গোস্ত, হাঁসের ডিম, ইলিশ মাছ, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, কলা, কমলা, লেবু, আপেল, আঙ্গুর, কাজু বাদাম, চীনাবাদাম, গমের তৈরির খাবার, দুধ ও দুধের তৈরি খাবার, চকোলেট ইত্যাদি খাবারে যাদের অ্যালার্জি থাকে তা তা পরিহার করে চলুন। মনে রাখা দরকার সব খাবারে সবার অ্যালার্জি নাও থাকতে পারে।
গরুর দুধ, বিশেষভাবে শিশুদের গরুর দুধ না খাওয়ানো ভাল।
অতিরিক্ত মসলা, ভাজাপোড়া, চর্বিযুক্ত খাবার, কিংবা এসিড জাতীয় খাবার, যার দ্বারা তার শ্বাসকষ্ট বাড়ে তা পরিহার করা।
মদপান, ধূমপান পুরোপুরি বাদ দিতে হবে।
রাতে মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করুন।
অ্যাজমা রোগীদের জন্য কিছু নিয়ম
সাধারণ পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ে গ্রহণ করুন।
রাতের খাবার পেটভরে খাবেন না। ঘুমানোর দুই ঘণ্টা পূর্বে রাতের খাবার খাবেন।
লাল, হলুদ ফল, শাকসবজি নিয়মিত খাবেন। কারণ এতে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন থাকে যা ফুসফুসকে শক্তিশালী করে।
ভিটামিন সি ও ই সমৃদ্ধ খাবার খেলে ফুসফুস ভাল থাকে। এ জন্য সবুজ ফল ও শাকসবজিতে যেমন: ভিটামিন সি পাবেন তেমনি ভিটামিন ‘ই' পাওয়া যাবে মারজারিন, সয়াবিন, অলিভ অয়েল ইত্যাদিতে।
শ্বাসকষ্টের সময় প্রচুর পানি পান করুন। যাতে আপনার কাশি তরল হতে পারে।
খুব সকালে নিয়মিত ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করুন। সকাল বেলা হাঁটুন এবং কিছু ব্যায়াম করুন। ৮. বেশি রাত জাগবেন না। নির্দিষ্ট নিয়মে সন্ধ্যা রাতে ঘুমাতে যান এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠুন। ৯. মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন এবং ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করুন। ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে চলুন।
চিকিৎসা :
অ্যাজমা বা হাঁপানি (শ্বাসকষ্ট)নিয়ন্ত্রণের জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ এলোপ্যাথিক ঔষধ ব্যবহার করলে সেবনকৃত ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আরো অনেক জটিল সমস্যারা সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাই এই সকল জটিলতা এড়াতে যে কেউ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে অভিজ্ঞ একজন হোমিও ডাক্তারের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নেয়া অতি জরুরি।
সাইনুসাইটিস এক যন্ত্রণাদায়ক রোগের নাম! এ রোগে মাথা তীব্র ব্যথা করে, কোন কাজে মনযোগ দেয়া যায় না, কোন কিছুই ভাল লাগে না! কেন হয় এই রোগ? এর লক্ষণ কি? চিকিৎসা কি? আমাদের মুখমন্ডলের হাড়ের ভিতরে কিছু ফাঁপা জায়গা আছে তাকে সাইনাস বলে। কোন কারণে যদি সাইনাসগুলির মধ্যে ঘা বা বা প্রদাহ হয় তখন তাকে সাইনুসাইটিস বলে।
সাইনুসাইটিস রোগের কারণ
দাঁত, চোখ, নাকের অসুখ থেকে সাইনুসাইটিস হতে পারে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা এলার্জির কারণেও সাইনুসাইটিস হয়ে থাকে দীর্ঘদিন ঠান্ডা লেগে থাকলে সাইনুসাইটিস হতে পারে
সাইনুসাইটিসের লক্ষণ ও উপসর্গ
প্রচন্ড মাথাব্যথা হয়। সকালে কম থাকে, দুপুরের দিকে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায় আবার বিকেলের দিকে সামান্য কমে যায় আবার সন্ধ্যা বা রাতে তীব্র হয়।
মাথা নাড়াচাড়া করলে, হাঁটলে বা মাথা নিচু করলে ব্যথার তীব্রতা আরো বেড়ে যায়
জ্বর জ্বর ভাব থাকে, কোনো কিছুতেই ভালো লাগে না এবং অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যায়
তীব্র সর্দি থাকে
নাক বন্ধ থাকে। পরীক্ষা করলে নাকের ভেতর পুঁজ পাওয়া যেতে পারে
সাইনাস এর এক্স রে করলে সাইনাস ঘোলাটে দেখায়।
সাইনাসের ইনফেকশন
নাকের এলার্জি থাকলে, নাকের হাড্ডি বাঁকা থাকলে, নাকের ভেতর বাইরের কিছু ঢুকলে এবং এডিনয়েড (নাকের পেছনের টনসিল) বড় হলে
দাঁতের ইনফেশন থেকে বা দাঁত তুলতে গিয়েও সাইনাসে ইনফেকশন হতে পারে
সাইনাসের হাড্ডি ফেটে গেলেও এরূপ হতে পারে
ময়লা পানিতে ঝাঁপ দিলে ঐ পানি নাকের ভেতর দিয়ে সাইনাসে ঢুকেও এ ধরণের সমস্যা তৈরি করতে পারে
এছাড়াও অপুষ্টি, আবহাওয়া দূষণ এবং ঠান্ডা স্যাঁতসেতে আবহাওয়ায় এই রোগ বেশি হয়।
সাইনুসাইটিসের জটিলতা
সাইনাসগুলো চোখ এবং ব্রেইনের পাশে থাকে বলে সাইনাসের ইনফেকশন হলে তা চোখ এবং মস্তিষ্কেরও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন-
সাইনুসাইটিস
স্বাভাবিক সাইনাস বনাম সাইনুসাইটিস আক্রান্ত সাইনাস
অরবিটাল সেলুলাইটিস এবং এবসেস বা চোখের ভেতরের ইনফেকশন।
মেনিনজাইটিস বা ব্রেইনের পর্দার প্রদাহ।
এক্সট্রাডুরাল এবং সাবডুরাল এবসেস।
অস্টিওমায়েলাইটিস (মাথার অস্থির প্রদাহ)।
কেভেরনাস সাইনাস থ্রম্বোসিস প্রভৃতি।
সাইনুসাইটিসের কারণে চোখের ভেতরে ইনফেকশন ঢুকে চোখটি নষ্ট করে দিতে পারে, আবার মাথার ভেতর ইনফেকশন ঢুকে মেনিনজাইটিস এমনকি ব্রেইন এবসেসের মতে মারাত্মক জটিল রোগের জন্ম দিতে পারে।
সাইনুসাইটিসের চিকিৎসা
সাইনুসাইটিসের কারণে মাথব্যথা হয়েছে বলে মনে হলে যতদ্রুত সম্ভব একজন অভিজ্ঞ হোমিও ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। সাইনুসাইটিস থেকে বাঁচতে সতর্কতা হিসেবে ধুলাবালি এড়িয়ে চলা, প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করা, নাকের ভিতর ময়লা পানি যাতে না ঢুকে সেদিকে খেয়াল রাখা, দাঁতে সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসা নেয়া, ঠান্ডা যাতে না লাগে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা, ঘর যাতে ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা যেতে পারে।
নাকে পলিপ
নাকে পলিপ হওয়ার কথা আমরা সবাই কম-বেশি শুনেছি। রোগীরা পলিপ বলতে সাধারণত যা বুঝে থাকেন মেডিকেলের ভাষায় আমরা সেটিকে পলিপ বলি না। নাকের আশপাশে কিছু প্রকোষ্ঠ (সাইনাস) আছে। চোখের ঠিক নিচে যে উঁচু হাড়টি আছে তার ভেতরে থাকে ম্যাক্সিলারি সাইনাস, নাক আর চোখের মাঝখানে যে ক্ষুদ্র স্থান সেখানে থাকে বেশ কয়েকটি ইথময়েড সাইনাস। কপালের সম্মুখভাগে থাকে ফ্রন্টাল সাইনাস। চোখের পেছন দিকে থাকে স্ফেনয়েড সাইনাস। এ সাইনাসগুলোর আবরণী অনেক সময় ফুলতে ফুলতে আঙ্গুরের থোকার মতো আকার ধারণ করে। একেই আমরা ডাক্তারি পরিভাষায় পলিপ বলে থাকি।
সাধারণত ইথময়েড সাইনাস থেকে পলিপ তৈরি হয়। কখনও কখনও ম্যাক্সিলারি সাইনাস থেকেও পলিপ তৈরি হতে পারে। নাকের মধ্যে ফাংগাস ইনফেকশন আমরা অনেক সময় দেখে থাকি। নাকের ফাংগাল (ছত্রাক) ইনফেকশন থেকে নাকের উভয় দিকে এবং এ ক্ষেত্রে একাধিক সাইনাস পলিপ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এ পলিপগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে সাইনাসের ভেতর থাকে।
এক সময় এটা বাড়তে বাড়তে সাইনাস থেকে নাকের ভেতরে চলে আসে এবং তখন আমরা খালি চোখে নাকের ভেতরে পলিপ দেখতে পাই। এগুলো দেখতে অনেক সময় সাদা আঙ্গুরের থোকার মতো থাকে। অনেক সময় পলিপে ইনফেকশন হলে বা আঘাতজনিত কারণে এর ত্বকের স্তর মিউকোসা ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনেক সময় এটা লালচে রঙ ধারণ করতে পারে। রোগীরা সাধারণত যাকে পলিপ বলে থাকেন সেটা আসলে নাকের মধ্যে মাংস ফুলে যাওয়াকে তারা বুঝিয়ে থাকেন। মেডিকেলের ভাষায় একে হাইপারট্রপিড ইনফেরিয়র টারবিনেট বলা হয়। নাকের ভেতরে, পার্শ্ব দেয়ালে দুই দিকে দুইটি তাকের মতো মাংসপিণ্ড থাকে।
একে আমরা ইনফেরিয়র টারবিনেট বলি। এই ইনফেরিয়র টারবিনেটের প্রদাহ হলে এর আকৃতি বড় হয়ে যায়। যাকে হাইপারট্রপিড ইনফেরিয়র টারবিনেট বলা হয়। এটা সাইনাস থেকে আসে না। নাকের ভেতর থেকে এর উৎপত্তি। মেডিকেল ভাষায় এটা পলিপ নয়। অনেক ক্ষেত্রেই পলিপ এবং হাইপারট্রপিড ইনফেরিয়র টারবিনেটের কারণ একই এবং এ দুটো একসঙ্গে বিদ্যমান থাকে।
নাকে পলিপের উপসর্গ
প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীরা সাধারণত নাক দিয়ে সর্দি ঝরা, নাক বন্ধ ভাব এ ধরনের সমস্যায় ভোগেন। নাকের এ সর্দি সামনের দিকে আসতে পারে। অনেক সময় এটা সামনের দিকে না এসে পেছন দিকে চলে যায় এবং ঢোক গিলা বা গলা পরিষ্কার করার মতো প্রবণতা দেখা যায়। নাক বন্ধ থাকাটা প্রাথমিক পর্যায়ে একদিকে থাকে এবং কিছুক্ষণ পরপর এটা দিক পরিবর্তন করে নাকের দুই দিকে হয়। কিছু সময় এক নাক বন্ধ থাকে আবার কিছু সময় আরেক নাক বন্ধ থাকে। অসুখ যত বাড়তে থাকে ততই দেখা যায় ধীরে ধীরে দুটো নাকই বন্ধ হয়ে যায়, প্রথমে আংশিকভাবে এবং পরে সম্পূর্ণভাবে।
হাঁচি থাকতে পারে এবং অল্প ধুলাবালি বা ধোঁয়াতে গেলেই প্রচণ্ড হাঁচি হতে থাকে। সিগারেটের বা রান্নার ধোঁয়া সহ্য হয় না। দম বন্ধ ভাব চলে আসে।
নাকের ঘ্রাণশক্তি কমে যায় এবং অনেক সময় নাকে দুর্গন্ধ পাওয়া যায়।
মাথাব্যথা সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পলিপ যখন বেশ বড় আকার ধারণ করে তখন মাথাব্যথা চলে যায়। এর কারণ যে অবস্থাতে আমরা পলিপ দেখতে পাই সে অবস্থাতে মাথাব্যথার সমস্যা সাধারণত থাকে না। মাথা এবং কপালের সম্মুখ বা নাক এবং এর আশপাশে একটা বন্ধ ভাব থাকতে পারে। এ সময় রোগীর ইতিহাস নিলে অবশ্যই দেখা যাবে, কয়েক মাস বা কয়েক বছর আগে যখন এ রোগ শুরু হয়েছিল তখন তাদের মাথাব্যথার সমস্যা ছিল। পলিপ যখন বেশি বড় হয়ে যায় তখন মাথাব্যথার সমস্যাটা এতটা প্রকট থাকে না।
দেখা যায় কিছু কিছু রোগীর গলায় খুসখুস ভাব থাকে। অনেকের আবার কাশিও থাকতে পারে। গলায় নিয়মিত প্রদাহ বা মুখ দিয়ে নিয়মিত শ্বাস নেয়ার ফলে অনেক সময় গলার স্বর বসে যায় বা গলা বসা বা স্বরভঙ্গ থাকতে পারে।
নাকের পেছনে ইউস্টেশিয়ান টিউব আক্রান্ত হওয়ার কারণে অনেক সময় মধ্য কর্ণে সমস্যা হয়ে থাকে। কান বন্ধ বন্ধ ভাব বা কানের ভেতর পানি যাওয়ার কারণে কান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাথা ঘুরানোর সমস্যাও থাকতে পারে। মধ্যকর্ণের এ সমস্যা থেকে অল্প-স্বল্প মাথা ঘুরানোভাব থেকে শুরু করে মারাত্মক রকমের মাথা ঘুরানোর সমস্যা থাকতে পারে। এ ছাড়াও কানের ভেতরে শোঁ শোঁ আওয়াজের সমস্যাও হতে পারে। কানের ভেতরে অনেক দিন পানি জমে থাকলে কানের পর্দা নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদে কান পাকা রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
নাকে পলিপ হওয়ার কারণ
নাকের পলিপের কারণ নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। সাধারণভাবে বলা যায় নাকের এলার্জি এর অন্যতম কারণ। এ এলার্জি নাকের ভেতরে ধুলাবালি বা ধোঁয়ার এলার্জি থেকে হতে পারে। অনেকে মনে করেন, নাকের ভেতরে ক্রনিক ইনফেকশনও এ এলার্জির কারণ হতে পারে। নাকের ভেতরে ফাংগাল ইনফেকশনের এলার্জি থেকে কিছু কিছু রোগীর উভয় নাকে এবং অনেক সাইনাসজুড়ে পলিপ তৈরি হয়। নাকের ভেতরে রক্তনালির অসাঞ্জস্যতা বা অস্থিরতা থেকেও অনেক সময় পলিপ তৈরি হয় বলে অনেকে মনে করেন।
নাকের এলার্জি যেটাকে আমরা এলার্জিক রাইনাইটিস বলি, গলার এলার্জি যেটাকে আমরা এলার্জিক ফ্যারিনজাইটিস এবং ফুসফুসের এলার্জি যেটাকে আমরা অ্যাজমা বা হাঁপানি বলে থাকি- এর একটা আরেকটার সঙ্গে সম্পৃক্ত। যাদের নাকের এলার্জি আছে তাদের শতকরা ১৭ থেকে ১৯ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে হাঁপানিও আছে। যাদের হাঁপানি আছে তাদের ৫৫ থেকে ৭০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে নাকের এলার্জিও থাকে। বিশেষভাবে বলা উচিত, নাকের এলার্জি ও ফুসফুসের এলার্জির (হাঁপানি) একটির প্রভাব আরেকটির ওপর পড়ে। নাকের এলার্জি ঠিকমতো কন্ট্রোল না করলে অনেক সময় হাঁপানি বেড়ে যেতে পারে বা হাঁপানির চিকিৎসা করা দুরূহ হতে পারে। সে রকম ফুসফুসের এলার্জি বা হাঁপানি ঠিকমতো চিকিৎসা করা না হলে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া নাকের ওপর পড়ে।
চিকিৎসা
সাইনুসাইটিস, নাকে পলিপ, মাংস বৃদ্ধি, মাথা ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট সমস্যার সবচেয়ে ভালো সমাধান হলো সমাধান হল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নেয়া। তাই এই সমস্যায় আক্রান্ত হলে অভিজ্ঞ একজন হোমিও ডাক্তারের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নিন।